1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

সচেতনতা অনেকাংশে কোভিড –১৯ প্রতিরোধ করতে পারে।

  • Update Time : সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১
  • ২৯১ Time View

সচেতনতা অনেকাংশে কোভিড –১৯ প্রতিরোধ করতে পারে।

— নাইম ইসলাম নিবির।  

যে কোনও ভাইরাসকেই জড় পদার্থ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু এরা একবার কোনও জীবের ভিতরে প্রবেশ করলে সেই জীবের জীবন সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে জীবিত জীবাণুর রূপ নেয় এবং তার সাহায্যে দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি করে। পরিণামে সেই জীবের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

বৈজ্ঞানিক বিবেচনায় প্রত্যেকটি ভাইরাস অনুগত ভাবে এক প্রকার প্রাণী বা পশুর দেহে সংক্রমিত হয়। কিন্তু গত দু’দশক যাবৎ আমরা দেখছি যে বেশ কয়েকটি পশু- নির্দিষ্ট ভাইরাস তাদের নির্ধারিত লক্ষ্য ছেড়ে আমাদেরও আক্রমণ করছে। এই ধরনের ভাইরাস নিজেদের জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে পশুর পাশাপাশি মানুষকেও তাদের লক্ষ্য বানিয়েছে। তারপর ঘাতক রূপ ধারণ করে আমাদের অবধারিত মৃত্যুর পথে টেনে নিয়ে গিয়েছে এবং যাচ্ছে। এ রকম ভাইরাসের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

আমাদের অস্তিত্বকে তারা আজ রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। আর এ ধরনের ভাইরাসগুলোর মধ্যে শুরুতেই এইচআইভি-র নাম আসে। তার পর চিকুনগুনিয়া, সার্স, মার্স, ইবোলা, মারবুর্গ, ওয়েস্ট নাইল, এভিয়ান এইচ এন ইনফ্লুয়েঞ্জা (বার্ড) এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা (সোয়াইন ফ্লু), নিপা ও জিকা-র মতো মারাত্মক জীবননাশক ভাইরাস। এরা আগে কোনও দিন আমাদের আক্রমণ করেনি, কিন্তু আজ এদের আক্রমণেই আমরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছি। এদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত আমরা কোনও কার্যকর ওষুধ বা প্রতিষেধক তৈরি করে উঠতে পারছি না। করোনাভাইরাস এদেরই মতো; সার্সের উত্তরসূরি।

কী বৈশিষ্ট্য এই নোভেল করোনা বা সার্স কোভ–২ ভাইরাস এবং তার ঘটানো কোভিড–১৯ রোগের যে তা থেকে আমাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। উত্তর বোধ হয় একটাই এই ভাইরাসটির অভূতপূর্ব সংক্রমণ এবং মারণ ক্ষমতা, যা এর আগে কোনও জীবাণুতে দেখা যায়নি। ভাইরাসটির জিন গঠন থেকে দেখা যাচ্ছে যে, সে পরিকল্পিত ভাবে এই দু’টি বৈশিষ্ট্যের মিল ঘটিয়ে আমাদের মধ্যে কেবল দ্রুত ছড়িয়েই যাচ্ছে না, ফুসফুসে রোগ ধরিয়ে আমাদের মৃত্যুও ডেকে আনছে। এই ভাইরাসটির আরও এক ভয়ঙ্কর বৈশিষ্ট্য, তা এক জন মানুষকে কোনও ভাবে অসুস্থ না করেও তার ভিতরে ২১ থেকে ২৫ দিন অধি বিস্তার করতে পারে। এ রকম ব্যক্তিদের তাই কোভিড-১৯ এর “অ্যাসিম্পটম্যাটিক’’ (রোগের কোনও উপসর্গ নেই) বা লক্ষণবিহীন বাহক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই ব্যক্তিরাই ভাইরাসটি ছড়ানো বা‘কমিউনিটি স্প্রেডিং’-এ মূল ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের সংক্রমিত ব্যক্তিরাই এই রোগকে স্টেজ ২ (নির্দিষ্ট এলাকায় সীমিত) থেকে স্টেজ ৩ (গোষ্ঠীর মধ্যে ছড়ানো পর্যায়ে নিয়ে যেতে সবচেয়ে সাহায্য করে। এখনও আমরা ঠিক জানি না যে এই রকম কত জন লক্ষণবিহীন ভাইরাস বাহক আমাদের দেশে অজান্তে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এর প্রধান কারণ, আমরা সেই পরিমাণে মানুষের মধ্যে ভাইরাসটির পরীক্ষা করে উঠতে পারিনি। তাই আমাদের দেশে এই সঙ্কটের সঠিক ছবিটা এখনই পাওয়া কঠিন।

কিন্তু যে বিষয়টি পৃথিবীকে সব থেকে বেশি হতভম্ব করছে, তা হল এত সতর্কতা সত্ত্বেও কী করে এই ভাইরাসটি এত দ্রুত ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এর এক প্রতিবেদন দেখিয়েছে যে এই ভাইরাসটি হাওয়ায় তিন ঘণ্টার বেশি এবং প্লাস্টিক বা স্টিলের ওপর ২-৩ দিন বেঁচে থাকতে পারে। এই তথ্য যদি ঠিক হয়, তা হলে কি এটি হাওয়াতেও সংক্রমণ ঘটানোর বা এয়ারবোর্নী হওয়ার ক্ষমতা রাখে? এর চেয়েও চিন্তার বিষয়, যদি ভাইরাসটি জড় বস্তুর (কোমাইট) ওপরে এত দিন বেঁচে থাকতে পারে, তাহলে ২ ঘণ্টা অবধি সেটির সংস্পর্শে যে আসবে, সেও- এই ভাইরাসটির দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তাই যে কোনও খোলা পড়ে থাকা জিনিসই পরিষ্কার না করে স্পর্শ করলে আমাদের বিপদ হতে পারে।

এই করোনা ভাইরাস নামক মুসিবত থেকে আমাদের সকলের মুক্তির জন্য প্রয়োজন  সঠিক কৌশল আর সতর্কতা। যেহেতু এই ভাইরাসটি শুধু একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের দেহে ছড়ায়, তাই আমাদের নিশ্চিতভাবে সচেতন থাকতে হবে যে আমরা নিজেদের শরীরে ভাইরাস বহন করব না, বা অন্যকে সংক্রমিত হতে দেব না। সেই হিসেবে আমাদের এই ‘লকডাউন’ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সঙ্কল্প একেবারে সঠিক পদক্ষেপ। এতে আমাদের মধ্যে যারা কোভিড-১৯ এর কোনো রকম দৃশ্যমান উপসর্গ ছাড়া ভাইরাসটি বহন করছে (অ্যাসিম্পটমাটিক ক্যারিয়ার্স), তাদের জনসাধারণের বা ‘কমিউনিটি’র মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা অনেক কমে যাবে। যদিও তাদের কাছের লোকেদের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে যে ঘরবন্দি হয়ে সামাজিক দুরত্ব (সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং) বজায় রাখা মানে এ-ই নয় যে অবাধে বাড়ির সবার সংস্পর্শে আসা। বরং খেয়াল রাখতে হবে যে বাড়ির প্রবীণ আর অসুস্থরা (বিশেষ করে ডায়াবিটিস ও উচ্চরক্তচাপের রোগী) যেন একেবারে বাড়ির অন্যদের থেকে আলাদা থাকেন। কেননা, তাঁদের কোভিড-১৯ হলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে পারে। এই সময় আমরা কাউকে বাইরে থেকে বাড়িতে ঢুকতে দেব না। কাউকে যদি কোনও জরুরি কাজে বাইরে যেতে হয়, তাহলে বাড়িতে ফিরেই তাকে জুতো খুলে কিছু স্পর্শ না করে জীবাণু মুক্ত হতে হবে। তার পুরো পোশাক গরম ডিটারজেন্ট পানিতে চুবিয়ে রাখতে হবে অন্তত ১৫ মিনিট। গরম পানি ও সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে। শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করতে হবে। তবেই বাড়ির কোনও জিনিস স্পর্শ করা যাবে। আমরা যেন বাড়িতে অনাবশ্যক জিনিসে হাত না দিই, এবং মুখে হাত দেওয়ার আগে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। আর একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যেহেতু কোভিড-১৯ এর উপসর্গগুলোর (যেমন, কাশি, জ্বর, মাথাব্যথা) সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গে মিল রয়েছে, তাই এই সময় ঠান্ডা লাগানো থেকে যথাসম্ভব সচেতন থাকতে হবে। কারণ সাধারণ জ্বর ঠান্ডার এই জাতীয় কোনও উপসর্গ দেখা দিলে তা বাড়িতে অকারণ ত্রাস সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়াও যারা আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছে বা আসছে তাদেরকে অবশ্যই টেস্ট করে অবস্থান জেনে নিতে হবে।

বিশেষ করে স্বাস্থ্য কর্মীদের অথবা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত দেশগুলি থেকে যারা ফিরেছে তাদের টেস্ট করানো দরকার, যাতে সংক্রমিতদের আস্তে আস্তে শনাক্ত করা যায়।

এটা বোঝা দরকার যে ভাইরাসের থেকে নিজেকে লুকিয়ে রেখে হয়তো আমরা সাময়িক ভাবে তার হাত থেকে নিস্তার পেতে পারি, কিন্তু এটি যতক্ষণ দোরগোড়ায় বসে থাকবে, ততক্ষণ এটি আবার আমাদের আক্রমণ করতে পারে। তাই এই ‘লকডাউন’ একটি স্বল্পমেয়াদি বা শর্ট টার্ম পরিকল্পনামাত্র যাতে এই ভাইরাসের দ্রুত প্রসার বা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। তার সঙ্গে কার্যকর দীর্ঘমেয়াদি বা ‘লং টার্ম’ পরিকল্পনার মাধ্যমে এই ভাইরাস নির্মূল করার পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে। যাতে এজাতীয় কোনো ভাইরাস ভবিষ্যতে এমন দুর্ভোগ ঘটাতে না পারে। যদিও এই ভাইরাস ঠেকাতে টিকা তৈরি নিয়ে সারা পৃথিবীতে খুব উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে, কিন্তু তা কতটা কার্যকর হবে সেটা সময়ই বলবে। এই ধরনের ভাইরাস খুব দ্রুত তাদের বৈশিষ্ট্য বা জিন পরিবর্তন এই রকম টিকাকেও অক্ষম করে দিতে পারে।

আমাদের মধ্যে অনেকেই এ রকম জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারার ফলে এই ধরনের মহামারির ক্রমশ উপশম ঘটেছে। প্রধানত, এরাই শেষ অবধি সবাইকে জীবাণুটির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে, যাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় ‘হার্ড ইমিউনিটি বলা হয়ে থাকে। করোনার বিরুদ্ধেও ‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে তোলা খুব প্রয়োজন। আমরা যদি কোভিড-১৯ এর স্টেজ ৩-এ ঢুকে পড়ি, আমাদের সবচেয়ে বড় ভরসা হবে ১৮ কোটির মধ্যে প্রায় ৮ কোটি নাগরিকের বয়স ৩৫ বছরের নীচে এবং এরা এই ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হলেও প্রবল ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা কম। বরং এরাই ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে প্রতিরোধক অ্যান্টিবডি তৈরি করে বাকি সবাইকে হার্ড ইমিউনিটি’র সুরক্ষা দিতে পারে। তাই এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়লেও আমরা আশানুরূপ ভাবে সেটা হয়তো কাটিয়েও উঠতে পারব।

লেখকঃ রাজনীতিক ও কলামিস্ট।

nayemulislamnayem148@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..